অনেকের মনে প্রশ্ন,ভাইয়া আমি আর্টসে পড়ি,অনেকেই বলছে আর্টসের ভবিষ্যৎ নাকি অন্ধকার,আর্টসে পড়ে নাকি কিছুই করা সম্ভব নয়,
এমন কথা শুনে খুবই হতাশায় ভুগছি,এমন এমন টাইপের কথা যদি তুমি শুনে থাকো তাহলে হ্যা তোমাকেই বলছি,এই পোষ্টটা তোমার জন্যেই।
এবার কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক মূল কথায়।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে কঠিন বাঁধাটি অতিক্রম করতে হয় এইচএসসি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার প্রবেশ মুখে। মাধ্যমিক উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে এসেই আমাদের অনেক কে বেছে নিতে হয়, বিজ্ঞান পরব, মানবিক শিক্ষায় পড়ব না ব্যবসা শিক্ষায় পড়ব। বিজ্ঞানের পর অবশ্য ছাত্র ছাত্রীরা ব্যবসা শিক্ষায় পড়তে ছেলে মেয়রা বেশি আগ্রহী। কিন্তু পরার পর ভবিষ্যতে আপনি কোন লাইনে পড়াশুনা করতে পারেন সেটা নিয়ে এই লেখাটি ।
এইচএসসি পাশের পূর্বেই অর্থাৎ স্কুল পূর্বেই যদি এই লেখাটি একজন অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীর হাতে যায় তাহলে এইচএসসি উত্তর উচ্চশিক্ষা বিষয়ক যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটিতে অনেক সুবিধা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
অর্থনীতি (Economics)
একটি দেশের সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্থনীতিবিদদের। তাছাড়া বর্তমানে অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিভাগের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত অনেক কলেজে এই বিষয়টি পড়ানো হয়।
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অনেক বিষয়ের উপর পিএইচডি করা যায়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করা ছাড়াও দেশের ব্যাংক বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম, শিক্ষকতা ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে চাকুরি লাভ করে থাকে।
আইন (Law)
আইন বিষয়ের চাহিদা বহুবিদ- প্রথমত, আইনজীবী হিসেবে কোর্টে মামলা পরিচালনা করা। দ্বিতীয়ত, সরকারি (বিসিএস জুডিশিয়াল) এবং দেশি, বিদেশি ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানীতে আইন কর্মকর্তা বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করে কাজ করা যায়।উল্লেখ্য সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন আদালতে আইনজীবীদের মধ্য থেকেই আইন কর্মকর্তা নিয়ে থাকেন। এসব ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু আছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত আইন কলেজেসমূহে সাধারন এলএলবি ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ইংরেজি (English)
ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা ও সাহিত্য। আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার দরুন এর ব্যাপক চাহিদা আছে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে। বলা চলে চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি জানার কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন মালটিন্যশনাল কোম্পানী, দূতাবাস ও বিদেশে চাকুরি নেওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি অপরিহার্য ভাষা। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির চাহিদা সর্বজন স্বীকৃত।দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান এবং দেশি ও বিদেশি ব্যাংকে উচ্চ বেতনে চাকুরির সু-ব্যবস্থ রয়েছে। বিসিএস এর বিভিন্ন ক্যাডারেও ইংরেজির ছেলে-মেয়েরা যথেষ্ট ভাল করে থাকে।
(Sociology/Anthropology)
অনার্সে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামাজিক আইন, দুর্য়োগ-ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ,এনজিও, মানবাধিকার, সামাজিক নীতি, জনবিজ্ঞান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সামাজিক গবেষণা, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার বিষয়ে পড়ানো হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হয়।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করা ছাড়াও দেশের ব্যাংক, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠন,বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম, শিক্ষাকতা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষক হিসেবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকুরি লাভ করে থাকে।
সমাজকল্যাণ/ সমাজকর্ম
(Social Welfare/ Social Work)
সমাজকর্ম মূলত একটি পেশা। আমাদের দেশে এটি এখনও পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও বিদেশি এনজিও সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠন ও সরকারি চাকুরির সুবিধা রয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে এমফিল এবং পিএইচডি করা যায়। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিশেষ করে USA, UK Australia, Canada) সমাজকর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে সমাজকল্যাণ পড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এর নাম সমাজকর্ম।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relation)
ঢাবি, জাবি, চবি-তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স কোর্স পড়ানো হয়। তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।
উপরোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ হতে এ বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া USA, Canada, Australia ও Europe- এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালটিন্যশনাল কোম্পানী, মানবধিকার সংগঠন সমূহ, বিভিন্ন এনজিও, বিদেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও পররাষ্ট্রবিষয়ক ক্ষেত্রে চাকুরির সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও
(ক) অনার্স ও মাস্টার্স প্রথম শ্রেণী প্রাপ্তির সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে ।
(খ) বিসিএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।
লোকপ্রশাসন (Public Administration)
ডিমান্ড সম্পর্কিত আলোচনায় লোকপ্রশাসনের ভবিষ্যৎ কি, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। ভাল ও সুন্দর রেজাল্ট করলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরির সুযোগ রয়েছে। লোকপ্রশাসনে বিসিএস ও সরকারি কর্ম-কমিশনে রয়েছে লোকপ্রশাসনের ছাত্রদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা।বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন মালটিন্যাশনাল কোম্পানী, মানবধিকার সংগঠন সমূহ, বিভিন্ন এনজিও, বিদেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও প্রশাসন ক্ষেত্রে চাকুরির সুবিধা রয়েছে।
পরিশেষে,তোমাদের সকলের মঙ্গল কামনা করি,তোমরা যেন সফলতা লাভ করতে পারো সেই দোয়া-ই করি।
0 Comments